ধারাবাহিক- জন্মসূত্র(১৭)

জন্মসূত্র
-সুব্রত হালদার

[ছত্রিশ]

সারাদিন চাষের কাজ সেরে দু’পক্ষই- মালিক আর হেলো-জনমজুর সকলে বাজারে উঠে পরদিন কোথায় কি কাজ হবে সেইসব দরকারি কথাবার্তা সারে। তারপর চা দোকানে চা খেতে খেতে একটু আড্ডা দিয়ে আবার সবর সবর যে যার বাড়ি ফিরে যায়। আড্ডা দিতে দিতে বেশি রাত করলে পরদিন সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়। এই কাজের সময় চাষী মজুররা সেটা করতে চায় না।

আজকের দুপুরের ভাগাড়ের ঘটনাটা মাথাতেই ছিল না সুধার। হঠাৎ চা দোকানে যতন রুইদাসকে দেখে স্মৃতি চাগাড় দিয়ে উঠতে আগ্ৰহ নিয়ে কথাটা পাড়লো সুধা, “হ্যাঁ রে যতন, বাবলা তোর ছেলের নাম?” হঠাৎ সুধার মুখে তার ছেলে বাবলার নাম শুনে অবাক হয়েই গেল যতন। বাবলার নাম এই সুধা-হেলো জানল কেমন করে? ওকে তো এখানকার বেশিরভাগ লোকেরই চেনার কথা না। বাবলা এখানে খুব কমই থাকে। মনে প্রশ্ন নিয়ে যতন বলল, “হ্যাঁ,বাবলা আমার ছেলে ছেলে। তা তুমি কি করে আমার ছেলেকে চিনলে সুধা-দা? আবার ও আমার ছেলে তাও নিশ্চিত হয়ে বলছো। কেন, ওর সঙ্গে তোমার আবার কোন ঝামেলা টামেলা হয়েছে নাকি? বাবলা তো ঝামেলা পাকানোর ছেলে নয়! কেন, কি হয়েছে আমাকে বলবে?”
-আরে বাবা, তুই অত উতলা হচ্ছিস কেন? আমার কথা শুনে তোর কি মনে হল, তোর ছেলের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়েছে? তা হতে যাবে কেন। তুই একদম ঠিক কথাই বলেছিস, তোর ওই ছেলে, কারোর সঙ্গে কোন ঝামেলা পাকানোর ছেলে নয়। ঠান্ডা মাথায় চুপিসাড়ে নিজের কাজ হাসিল করে কেটে পড়ায় চোস্ত তোর ছেলে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে হাসিল করতে যেখানে যেমন করা দরকার তা করতে ওর জুড়ি মেলা ভার। একদম বেড়াল-তপস্বীর মত- যেখানে চুপচাপ থাকা দরকার তো সেখানে ওর মত শান্তশিষ্ট ছেলে আর হয় না। আর যেখানে শিকারির ক্ষিপ্রতার প্রয়োজন সেখানে অত দ্রুত কাজ সারা, ওরে বাপরে বাপ! না দেখলে কারোর বিশ্বাস করানো মুশকিল। সেটা আজ আমার দুটো জ্বলজ্বলে চোখ দিয়ে দেখলাম। একটা গাঁয়ের ছেলে যে একাধারে এত ধীরস্থির আবার এতটা তরতরে হতে পারে, তা আমি এই তোর ছেলেকে প্রথম দেখলাম। তা তোর ছেলে গরুর পেট কেটে ওই কটকটে হলদেটে পাথরের মত একগুচ্ছ জিনিস নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে আমাদের ভাগাড় থেকে তোদের বাড়ির পানে ছুটলো! কি ওগুলো রে, যতন? চোখে মুখে কৌতূহল ঠিকরে বার করে সুধা বলল।
-তা তো আমি জানি না, দাদা। ও ছেলে কখন কোথায় কি করে, কবে কোথায় থাকে না-থাকে তা আমি বলতে পারবো না। কোথাও কিছু নেই হঠাৎ বাড়ি এলো। মায়ের সঙ্গে কি-সব ফুসফুস গুজগুজ করল। কিছু টাকা মায়ের হাতে গুঁজে দিল। আবার কখন দেখলাম বাড়ি নেই! বাবলার কাজকারবারের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আগে তো বাড়ি আসতই না। এই বছর খানেক হল বাড়ি আসা-যাওয়া করছে। চোখের সামনে নিজের ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি, এটাই আমার সান্ত্বনা।
-ছেলেটা তো দেখে মনে হল আঠেরো-কুড়ির মত বয়স। তা ও এখানে থাকে না তো থাকে কোথায়?
-মালদার হরিশচন্দ্রপুরের হরিজন পাড়ায় ওর মামারবাড়িতে ও মানুষ। আমার রতন-দার শ্বশুর বাড়ির দু’একটা ঘর পরেই আমার শ্বশুরবাড়ি। বৌদিই আমার এই সম্বন্ধটা পাকা করে দিয়েছিল। মায়ের বুকের দুধ-ছাড়ার বয়স থেকেই ছেলে ওখানে থেকে যায়। ওকে ওর দাদুর কি চোখে লেগে যায়, মেয়েকে বলে, “তোর ছেলেটাকে আমি মানুষ করবো। তোর কোন খরচা-খারচি করতে হবে না। আমাদের যা আয়-পয় আছে, তাতে আমার নাতিকে মানুষ করতে অসুবিধা হবে না।
-সে তো তাহলে বলতে হবে তোর পাতা-চাপা কপাল রে যতন। ছেলে পয়দা করলি অথচ তার খাওয়া-পরার দায় তোকে নিতে হল না। এমন ভাগ্য ক’জনের হয়। তা নাতিকে লেখাপড়া শিখিয়েছে, দাদু? নাহলে কেবল খেতে পরতে দিতে আর ঝক্কি কিসের। ও অনেকেই করতে পারে।
-না গো সুধা-দা। বুড়ো, ছেলেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছে। মাধ্যমিক পাশ, আমার বাবলা। বুড়োর ইচ্ছে ছিল নাতিকে আরও পড়াবে। কিন্তু বিধাতা নারাজ হলে নগণ্য মানুষের আর কি করার আছে। হঠাৎ করে বুকের ধুকপুকুনি থেমে গেল বুড়োটার। ডাক্তার দেখানোরও সময় দিল না। বড় দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেল। তখন আমরা বাবলাকে বললাম,“বাড়িতে চলে আয় খোকা। দাদু নেই। এবার তোর মামা-মামী তোকে পালতে চাইবে না। তোকে নিয়ে ওদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়ে যাবে। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আয়। তাতে মামাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল থাকবে। লোকের সংসারে আজকাল তো দেখছি, কি হচ্ছে সব।”
-ঠিকই প্রস্তাব দিয়েছিলিস তুই। মামা কিছু না বললেও, মামী তো পরের বাড়ির মেয়ে। সে মেনে নিতে নাও পারে। সমাজে যেন সব রোগ ধরে গেছে। ভালোবেসে পরের দায় কেউ নিতে চায় না। তার উপর ভাগনার সম্পর্কের কেউ।
-তা একদম তুমি ভুল কথা বলোনি গো সুধা-দা। সেই কথা উঠেছিল। তা আমার শাশুড়ি-মা কিছুতেই বাবলাকে ছাড়তে চাইল না। ছেলে-বউমাকে বলল, “আমার স্বামী বাবলাকে ভালবেসে এখানে রেখেছে। সেই গুড়বেলা মানে ছোটবেলা থেকে আমি ওকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। আমি বেঁচে থাকতে ওকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিতে পারবো না। তা ও বড় হয়েছে। ও যদি নিজে থেকে চলে যায় সেটা অন্য কথা। আমার বুক ফাটবে ঠিকই কিন্তু তখন আমার আর বাধা দেবার অধিকার থাকবে না। বাবলার খাওয়া পরার জন্যে তোদের চিন্তা করতে হবে না। এই গরু-বাছুর থেকে আমার যা আয় হয় তাতে আমাদের দুই দিদিমা-নাতির ভালভাবে চলে যাবে। তোদের সংসার নিয়ে তোরা থাক। আমরা আলাদা হাঁড়ি করে নিচ্ছি।” বুড়ি তাই করল। আর ছেলেও দিদিমাকে এত ভালবাসে, কিছুতেই ওখান থেকে আসতে চাইল না। কিন্তু লেখাপড়াটা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারল না ছেলেটা। দিদিমার অত ক্ষমতা ছিল না।
-তা তোর শাশুড়ি বেশ তেজী মহিলা বলতে হবে?
-হ্যাঁ, খুব চৌখোশ আর জেদি মহিলা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে, বুড়ির সেই তেজ মরে গেল একটা দুঃখজনক ঘটনায়। হঠাৎ একমাস পিঠোপিঠি বুড়ির দু-দুটো গাইগরু অজানা রোগে মরে গেল! বিডিওর ডাক্তার এসে কিচ্ছু করতে পারল না। তারা রোগই ধরতে পারল না! এইসব ডাক্তার পড়ে পাশ করেছে না টুকে কে জানে। রোগির রোগ ধরতে পারবে না তো সে কেমন ডাক্তার? ওই গরুর দুধ বিক্রির টাকাতেই তো বুড়ির যত নফর -চফর। এই পরিস্থিতিতে বুড়ির ঘাড়ের উপর বসে খাওয়া তো ঠিক না। তাই ছেলেকে আবার বললাম, “বাবলা, তুই এবার বাড়ি ফিরে আয়ে। তুই ওখানে থাকলে, তোকে নিয়ে দিদিমা বিপদে পড়বে। তার চাইতে তুই চলে এলে তোর দিদিমা তার আলাদা সংসারের হাঁড়ি তুলে দিয়ে ছেলে-বউয়ের সংসারে ঢুকে পড়তে পারবে।” কিন্তু ছেলে তো আমার কথার একদম উল্টো কথা বলল, “কি বলছো তুমি বাবা? দিদিমা আমাকে এত বড় করে তুলল। এখনো তার আঁচলের ওমে আমাকে রেখেছে। আর এখন দিদিমার খারাপ সময়ে আমি তাকে ছেড়ে স্বার্থপরের মত চলে যাব? তখন তো মামারাই বলবে, দেখলে তো মা, এইজন্যেই লোকে বলে- জন-মামাই-ভাগনা, তিন নয় আপনা। এই কথার জিন অর্থাৎ মর্মার্থ আমি ভেঙে তছনছ করে দেব। এ’কথাটা যে আমার কাছে কত ফালতু কথা, তা সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেব। দিদিমাকে আমি কিছুতেই মামা-মামীর বোঝা করে রাখতে দেব না।”
-তা তোর ছেলে তো তখন বেকার। কি করে সে দু’জনের সংসার সামলালো? মুখে বড় বড় কথা বলা আর কাজে তা দেখিয়ে দেওয়া তো এক কথা না।
-হ্যাঁ। ঠিক তাই। কাজ করেই সে দেখিয়ে দিল। আমি ভাবতে পারিনি আমার ছেলেটা এতটা গোঁয়ার। জেদ করে বসল, তাকে যেভাবেই হোক সৎ পথে রোজগার করতে হবে। দিদিমার কষ্ট সে দেখতে পারবে না। আর যা ভাবা তাই কাজ। ওর খেলাবয়সের দু’জন বন্ধু ট্রেনে হকারি করতো। সেই বন্ধুদের সাহায্যে সেও ট্রেনে হকারির কাজে লেগে পড়ল। প্রথম প্রথম কষ্ট হত। অসুবিধাও হত। ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হত অন্য হকারদের সঙ্গে। এই বন্ধুরাই আবার তা সামলে দিত। আসলে এইসব লাইনে নতুন কেউ ঢুকলে, মাটি কামড়ে না থাকতে পারলে পুরোনোরা তাকে খেদিয়ে দেবে। পুরোনোদের জমিতে হুট করে নতুন একজন ঢুকে তাদের রোজগারে ভাগ বসাবে আর তারা চুপ থেকে মেনে নেবে তা হতে দেবে না। নতুনকে যথেষ্ট লড়াই করে নিজের পায়ের তলার মাটি জোগাড় করে নিতে হয়। নতুন জীবনটা ছেলে কিছুদিনের মধ্যে রপ্ত করে নিল। দিদিমা-নাতির সংসারে অসুবিধা তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু উপরওয়ালার ডাকে দিদিমাও তার দাদুর কাছে চলে গেল। দাদু-দিদিমার গোলকভূমে যাবার ফারাকটা বেশিদিন ছিল না। বছর দেড়েক হবে। মামার বাড়িতে বাবলা একা হয়ে গেল। এবার নিজে থেকেই আস্তে আস্তে বাড়ি আসা শুরু করে। তবে পাকাপাকিভাবে না। এত বছরের জীবন যেখানে কেটেছে, তার মায়া সে ত্যাগ করে কেমন করে। ওর রোজগারের জায়গা, বন্ধু-বান্ধব সবই তো ওখানে। ওখানে সে দেড়-কামরার একটা ঘরও বানিয়েছে। তার জন্যে আমরা তাকে কিছু বলি না। ও যেটা ভাল মনে করবে তাই করবে। ওখানে ঘরটা থাকলে ওর মায়েরও বাপেরবাড়ি গিয়ে থাকার একটা নিজস্ব ঠাঁইও মেলে। আমিও যাই শ্বশুরবাড়িতে নিজের ঘরে থেকে আসি দিন কতক করে। একটু থেমে যতন আবার বলল, “এবার উঠি গো সুধা-দা। কথায় কথায় আমার অনেক কথা তোমাকে বলে ফেললুম। হঠাৎ ছেলের কথা তুললে। ছেলে-কাহানি শুনিয়ে দিলাম তোমাকে। বলতে বলতে রাত বেড়ে গেল। কাল আবার ভোর ভোর বিছানা ছাড়তে না পারলে কাজে বেলা হয়ে যাবে।”
-চায়ের দাম তোকে দিতে হবে না যতন। যাবার সময় প্রদ্যুৎকে বলে যা, তোর এই চায়ের দামটা আমি দিয়ে দেব। একটু পরে আমরাও চলে যাব। সুধা বলল।
দিঘিরপাড় বাজার থেকে বাড়ির পথে যেতে যেতে যতনের মনে পড়ল, সকালে সুধা-দার ছেতো ওই ভূপাল পাড়ায় খবর দিতে এসেছিল ভাগাড়ে গরু পড়েছে বলে। যতন শুনেছে। কিন্তু ওসব কাজ ও আর করে না বলে গা-করেনি সে কথায়। তারপরই অবশ্য ও দেখেছে বাবলা বাড়ি থেকে বার হয়ে গুটি গুটি পায়ে ভূপালের পেছন পেছন চলেছে। বাবলা তো আর গরুর চামড়ার কাজ করে না। তাই সে ছেলের যাওয়ার ব্যাপারে মাথা ঘামায়নি। ভাবল, অন্য
কোন কাজে ও বাইরে বেরোচ্ছে। ও যে সত্যি সত্যি ভাগাড়মুখো হচ্ছে তা যতন কল্পনাই করতে পারে নি। এখন সুধা-দার মুখে গল্প শুনে বুঝলো। বাড়িতে গিয়ে বাবলাকে জিজ্ঞেস করবে সে, ওই কালচে হলদে রঙের পাথরগুলো কি? গরুর পেট থেকে নাকি সে বার করেছে ওগুলো। প্রায় জীবনভর যতনরা গরু নিয়ে এত ঘাঁটাঘাঁটি করল, কোনদিন তো শোনেনি যে গরুর পেটে ওইরকম রঙিন পাথর থাকে ! তাও আবার সেগুলো নেবার জন্যে মানুষ ছুটে যায়! নিশ্চয়ই এগুলো কোন কাজের জিনিস। এবং দামী। সেটা বাবলা কোনভাবে জেনেছে। এখনো পর্যন্ত পাড়ার কোন মুচি এই পাথরের ব্যাপারটা জানে না তা সে হলফ করে বলতে পারে। জানলে চামড়ার ভাগ নেবার মত ওই পাথর ভাগ পাওয়ার জন্যে ছেঁড়াছেঁড়ি করতো ওরা। পয়সার গন্ধ পেলে কে-না তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। যতনও চুপ থাকতো না। তা এমন গোপনীয় জিনিসের কথা বাবলা বা ফেচকাতে যাবে কেন! কাউকে না জানিয়ে সে তো বুদ্ধিমানের কাজ করেছে।
বাড়িতে গিয়ে যতন ছেলের খোঁজ করলে ওর মা বলল, “সে খেয়েদেয়ে শুতে চলে গেছে।” একই বিছানায় ওরা বাপ-বেটা শোয়। খাওয়া সেরে যতন শুতে চলে গেল। বাবলা তখনও শুতে যায়নি। ছোট্ট পালিশহীন ফেরিওয়ালা- টেবিলের সামনে টুলের ওপর বসে কাগজ-টাগজ নিয়ে কিসব করছে। যতন বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করল, “কিরে বাপ। শুবি না? রাত হয়ে যাচ্ছে। আয় শুয়ে পড়। তুই শুলে তবে মশারি টাঙাতে পারব। যা মশার উৎপাত হয়েছে আজকাল!”
-তুমি মশারি টাঙিয়ে শুয়ে পড়ো বাবা। আমি একটু পরে শুচ্ছি। তোমার আবার সক্কালে উঠে কাজে বেরোতে হবে। এই হাতের কাজটা সেরে নিই। তারপর।
-হ্যাঁরে খোকা,একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? ইতস্তত করে যতন বলল। সঙ্গে সঙ্গে বাবলা বলল,“কি, বলো-না বাবা।”
-দৌলতপুরের সুধা-হেলো বলছিল তুই নাকি আজ কাউকে না জানিয়ে একদম গোপনে ভাগাড়ে গরুর পেট থেকে কিসব পাথর-টাথর বার করে দৌড়ে পালিয়ে এসেছিস? বাজারে দেখা হতে সে তো আমাকে চেপে ধরেছে। তুই কি জিনিস নিয়ে চলে এলি, সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছে। তা আমি তো তার কথা শুনে অবাক ! ‘কিছুই জানি না’ বলতে সে আমার কথা বিশ্বাস করল না। মুখে কিছু বলল না। তবে হাবভাবে বুঝিয়ে দিল, আমি তাকে গোপন করছি। কিন্তু সত্যি তো আমি কিছুই জানিনা।”
যতনের কথায় দেরি না করে ওর ফোমের সাইড ব্যাগ থেকে কাগজে মোড়া পাথরগুলো বাবাকে দেখাল, বাবলা। বলল, “দেখো বাবা, গরুর পেটে এগুলো থাকে। তবে সব গরুর পেটে আবার পাওয়া যায় না। কোন গরুর পেটে এগুলো থাকবে আর কার পেটে থাকবে না তা সাধারণভাবে কেউ বলতে পারবে না। ভাগ্য জোরে আজ আমি এই গরুর মধ্যে পেয়ে গেছি। না হলে কাটাছেঁড়া করে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হত। তবে একটা লক্ষণ আছে, যে লক্ষণটা জানতে পারলে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেই গরুটার পেটে এগুলো পাওয়া যাবেই যাবে। কিন্তু বাইরের কোন লোকের পক্ষে সেই লক্ষণ জানা সম্ভব নয়। লক্ষণটা জানতে পারে একমাত্র সেই বাড়ির মালিক বা যে সেই গরু সবসময় দেখভাল করে সে।
ছেলের কথা শুনে তাজ্জব হয়ে সে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল! বলে কি এ! গরু সম্পর্কে সে এত জানে? অথচ তার বাপ, গরু ঘেঁটে ঘেঁটে তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকলো, কিছুই জানলো না! প্রশ্নমুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর কি বলে তা শোনার জন্যে। বাবার মুখের দিকে চেয়ে বলল,“কি সেই লক্ষণ সেটা জানতে চাইছো তো? রাত্রে ঘুমের সময় যে গরু জোরে জোরে নাক ডাকে, দেখা গেছে প্রায় সবার ক্ষেত্রেই পেটের মধ্যে এমন পাথর আছে। অবশ্য দু-একটার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও হয়েছে। পাওয়া যায়নি। সেটা ধর্তব্যের মধ্যে না আনলে চলবে। যারা এইসব নিয়ে চর্চা করে তারা গবেষণা করে এটা জানতে পেরেছে। কিন্তু গরুর মালিক বা গরু দেখভাল করা লোকটা তো আর জানে না, নাক ডাকার মধ্যে এমন রহস্য লুকিয়ে আছে! আর বাইরের লোক বা জানবে কেমন করে কোন গরু ঘুমোবার সময় নাক ডাকছে কি ডাকছে না। তাই বাইরের লোক, যারা এইসব পাথর নিয়ে কাজ করে, তাদের আন্দাজেই ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। হয় ছক্কা, নয়তো ফক্কা!”
যতন এবার ধৈর্য ধরতে না পেরে সরাসরি ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁরে বাবা, এই পাথরের কি নাম? এর তো একটা নাম কেউ কোন সময় দিয়েছে। আর নিশ্চয়ই পাথরটা বাজারে অনেক দামে বিকোয়? আর একটা কথা বলতো, এটা কি কামে লাগে যে তার এতো দাম? আমার তো জানতে ইচ্ছে করছে।”
বাবার কথায় এবার একটু গম্ভীর হয়ে গেল বাবলা। বলল, “এগুলো সবই গোপন কথা বাবা। এর কোন উত্তর তোমাকে এখন আমি দিতে পারব না। সময় হলে তোমাকে বলব। এখন তোমাকে বললে তুমি যদি একবার বাইরে ফেচকে দাও তো আমি বিপদে পড়ে যাব। আমার ইনকাম চৌপাট হয়ে যাবে। এইসব কথা তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করবে না বাবা। এখানকার কেউ যখন জানে না তখন তোমাকেও জানতে হবে না। আমার জানা আমার মধ্যেই থাক।” ছেলের কথার ওপর আর কথা বাড়ালো না যতন। চুপ করে গেল।
নিত্যকারের মত মশারি টাঙিয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে বলল, “বেশি রাত করিস না বাবা। সকালে আবার শরীর ম্যাচ ম্যাচ করবে। কাল কি তুই হরিশচন্দ্রপুর যাবি, না থাকবি। যদি যাস তো, তোর মাকে বলতে হবে, সকাল সকাল রান্না বসিয়ে দিতে।” বাবার কথায় বাবলা বলল, “হ্যাঁ বাবা। কাল যাব। তুমি শুয়ে পড়েছো আর উঠতে হবে না। আমি মাকে বলে দিচ্ছি। ওখানকার কাজ সেরে তবে ফিরব। কবে ফিরব আগে থেকে বলতে পারব না।”
বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে যদি সে ট্রেনের হকারি লাইনে না আসত তাহলে কোনোদিন এই মহা-মূল্যবান বস্তুটার সঙ্গে পরিচয় তার হত না। বাবলা সেইজন্যে তার দুই বন্ধু, সুবোধ আর বিমানের কাছে ঋণী। সেইজন্যে যখনই ওর এই বন্ধুরা কোন অসুবিধায় পড়ে, বাবলা সব কাজ ফেলে ছুটে যায়। তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। অনেক বন্ধু আছে যারা কেবল সুযোগ সন্ধানে থাকে। কাজ হাসিল হয়ে গেলে কেটে পড়ে। এরা সেইসব বন্ধুর একদম উল্টো। এমন বন্ধু পাওয়াও ভাগ্যের দরকার। বাবলাও তাই তাদের ভোলে না। লেপটে রাখে বন্ধুদের ভাগ্যের সঙ্গে নিজের ভাগ্যকে।
তার নিজের তো কোন পুঁজি নেই। অথচ কিছু একটা করতে হবে। হঠাৎ মালদা স্টেশনে সুবোধের সঙ্গে দেখা। সুবোধই প্রথম তাকে দেখতে পায়, “কিরে বাবলা, কোথায় যাচ্ছিস? কতদিন পর তোকে দেখলাম। সেই ক্লাস ফাইভে স্কুল ছাড়লাম। বাবা অভাবের তাড়নায় পড়া ছাড়িয়ে দিল। তোর সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। আমরা কেমন ক’জন বন্ধু মিলে আলোচনা করে ক্লাসে পড়া দিতাম। আমি, তুই, বিমান একসঙ্গে খেলাধূলা করতাম। অন্য কেউ আমাদের মারতে এলে বা কিছু বললে আমরা তিনজনে মিলে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তাম। কি সুন্দর জীবন ছিল তখন বল? জানিস তো, ওই বিমানও এই ট্রেনে হকারি করে। আমি স্টেশনারী আইটেম আর বিমান আয়ুর্বেধিক ওষুধ। বিমান তো খুব ভালো ভালো কথা বলতে পারে। তাই ওই ওষুধ বিক্রিতে ও এক নম্বর। আমি আবার অত গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। আসলে অত বকর বকর আমার পোষায় না। তাই এটা আমি বেছে নিয়েছি। আমি তো হড়হড় করে আমার কথা বলে যাচ্ছি। এবার তোর কথা বল? তুই কদ্দুর লেখাপড়া করলি?”
-মাধ্যমিক পাশ করেছি। কিন্তু তা করেও তো কোন কাজে আসল না। তার থেকে তোরা অনেক ভাল আছিস। দাদু হঠাৎ করে মারা গেল। সংসারের আয় বন্ধ। দিদিমাকে নিয়ে এখন আমি অথৈ জলে। তাও দিদিমা দুটো গাই গরুর দুধ বেচে কিছু কাঁচা পয়সা আয় করত। তাতেও টুনমুন করে দু’জনের সংসারটা চলছিল। কিন্তু কি রোগে কে জানে, ডাক্তার রোগ ধরতে পারল না। পরপর ক’দিন ছাড়া ছাড়া দুটো গরুই মরে গেল। দিদিমার হাত এখন ফাঁকা ঢনঢন! সংসার আর চলে না। এখন আমাকে কিছু করতে হবে। কি করব বুঝতে পারছি না। হাতে পয়সা নেই যে ব্যবসা করব। ভবঘুরের মত তাই এই স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছি। খুঁজে বেড়াচ্ছি, যদি কোন ইনকামের সন্ধান পাই।
-হকারি করবি? অবশ্য তোর মত শিক্ষিত ছেলেকে হকারি করতে বলাটা আমার ঠিক না। তবু বলে ফেললাম। এই ট্রেনে হকারি এমন একটা পেশা না, তুই যা ইচ্ছা নিয়ে ব্যবসা কর। ট্রেন তোকে ফিরিয়ে দেবে না। সারাদিনে কিছু না কিছু আয়ের ব্যবস্থা করে দেবে। লোকের করুণা ভিক্ষের থেকে স্বাধীন ব্যবসা তো অনেক সম্মানের রে বাবলা। আমরা সেটা বুঝে গেছি। আর একটা কি জানিস, এতে কোন লজ্জার কিছু নেই। কোন কাজ তো ছোট নয় রে। তারপর একটা কথা কি বলতো, আমরা লোকের পকেট মেরে, চুরি ছিনতাই করে পয়সা কামাচ্ছি না তো ? পেটের দায়ে সৎ উপায়ে পয়সা রোজগারের জন্যে এই পেশায় এসেছি। হ্যাঁ এটা ঠিক, আমরা ‘হকার’ এই তকমা মানুষের মনে সবসময়ই গেঁথে থাকে। ট্রেনের কাজের বাইরে সাধারণ জীবনে, যেমন হাটে বাজারে বা অন্য কোথাও আমাদের দেখলে অন্য কোন সম্বোধনের কথা না ভেবে আমরা পরিচিত ‘হই হকার’ বলে। মানুষ বলবেই, ‘এই ছেলেটা ট্রেনে হকারি করে।’ এই পেশায় এলে সারা জীবন আমাদের পিঠে এই ‘হকার’ নামটা সেঁটে দেওয়া হয়ে যায়। আমাদের যেন আর অন্য কোন সামাজিক পরিচয় থাকে না। আমাদের পেশাটাই আমাদের পরিচয়। সে আর কি করা যাবে। ভাল পরিচয়ের মাদুলি গলায় ঝুলিয়ে থাকলে তো পেট চলবে না।” খানিক থেমে আবার সুবোধ বলল, “তোকে আমাদের লাইনে আসতে বলছি ঠিকই, তবে এখানে ঢোকাও খুব সহজ কাজ না রে বাবলা। তুই ঢুকলেই, যাই নিয়ে তুই কাজ কর, পুরোনো হকারকুল রে-রে করে তোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আদাজল খেয়ে তোর তাড়াবার চেষ্টা করবে। যতই তোর কাছে রেলের হকার পাশ থাকুক। অন্যের বেলায় আমরাও করি। আসলে আমরা সবাই ভাবি, নতুন একজন দলে ঢুকল মানে, পুরোনোর কামানোর উপর সে ভাগ বসাতে এল। তাদের পেটে টান পড়ার আশঙ্কায় সব এমন করে। তবে তুই যদি এই দলে ঢুকিস তো অতটা বেগ পেতে তোকে হবে না। যেটা আমরা পেয়েছি। আমাদের আট-দশ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরাই তোকে গার্ড দেব। তবে এমন অনেক আছে যারা তুই আমাদের গ্রুপের বলে নাও চিনতে পারে। তারা তোকে না চেনার জন্যে ঝামেলা পাকাতে পারে। সে আমরা সামলে দেব। বাধা পেলে তুই ঘাবড়ে যাবি না।” কথা বলতে বলতে একটা খদ্দের এসে সুবোধের কাছে ‘নেল কাটার’ চাইলো। ডেলি প্যাসেঞ্জাররা এলাকার সব হকারদের চিনে
যায়। কার কাছে কি পাওয়া যায় এদের জানা হয়ে যায়। দোকানের মত সরাসরি এদের কাছ থেকে কিনে নেয়। খদ্দেরটাকে ছেড়ে সুবোধ আবার বলল, “আসলে কি জানিস বাবলা, তোর প্রতি আমার একটা ভালোবাসা আছে। তোর জন্যেই আমি ক্লাস ফাইভ পাশ করতে পেরেছিলাম। না তো সেটাও হোত না। মাথা মোটা ছিলাম তো। কিছুই পারতাম না। তোর পাশে আমার সিট পড়েছিল। তোর মনটা এত ভাল, আমি জিজ্ঞেস করতেই গড়গড় করে তুই সব আমাকে বলে দিলি। সব বিষয়েই তাই হয়েছিল। তাই তোকে আমি ভুলতে পারিনি। কোনদিন পারবও না। এমন উপাকারি বন্ধু ক’জন হয়, বল না! সেই বন্ধু এখন বিপদে পড়েছে। তার পাশে আমি দাঁড়াবো না ?”
বাবলা তো কল্পনাই করেনি, দেবদূতের মত সুবোধ এসে তার সামনে হাজির হবে! দিশাহীন জীবন-সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে খড়কুটোর মত সুবোধ এসে তার সামনে হাজির। আর সেটাকে সে আঁকড়ে ধরবে না? না ধরলে যে হারিয়ে যাবে। সে হেরে যাবে। অত সহজে যে হার মানার ছেলে সে নয়। মনকে শক্ত করে সুবোধকে বলল, “আমি হকারি করব। তুই আমাকে সাহায্য কর। তুই যা বলবি তাই করব। কিন্তু কি কারবার করব সেটা তো ভাবতে পারছি না। ব্যবসা করার মত আমার তো কোন পুঁজিই নেই। কারবারে নামতে গেলে অল্প হলেও নিজস্ব কিছু পুঁজি তো লাগবে। সেটাই বা কোথা থেকে জোগাড় করি। দেখি দিদিমার সঙ্গে কথা বলি। তবে এই কাজটাই আমি করব, সুবোধ। তুই আমাকে সাহায্য করিস।”
-হকারিতে তেমন কোন পুঁজি লাগে না। বিনা পুঁজিতেও কাজ করা যায়। শুধু তোকে ভাবতে হবে কোন মালটা নিয়ে তুই হকারি করবি। সেটা ঠিক করতে পারলে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ওইটা ঠিক করাই বলতে পারিস বেশ ঝামেলার ব্যাপার। দেখবি যে জিনিস নিয়ে তুই কাজে নামবি হয়তো সেটা অন্য কেউ করছে। তখন তো সে ফুঁসে উঠবেই। আমাদের গ্রুপের লোকও বিরক্ত হতে পারে। তার পেটে লাথ পড়বে। সে ছেড়ে দেবে? দেবে না। ঝামেলাটা তখনই হয়। এমন জিনিস নিয়ে কাজে নামতে হবে, যেটা আমাদের এই এলাকায় কেউ করে না। তাহলে কেচাল কম হবে। তুই বাড়ি যা, বাবলা। আগে তুই তোর দিদিমার সঙ্গে আলোচনা কর। তারপর মন ঠিক করে স্টেশনে আয়। কাজে নামবি যখন ঠিকই করছিস তখন একটা কিছু তো ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বাবলাকে সাহস দিল সুবোধ।
পেট যখন নাড়িভুঁড়িকে মোচড় মেরে খাবার চাইবে তখন লেখাপড়া জানার মান নিয়ে বাবুয়ানার কোন মানে হয় না। এভাবে ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ নেই। লড়াইয়ের ময়দানে তাকে নামতেই হবে। সুবোধ তাকে যে সাহস দিচ্ছে, প্রকৃত বন্ধুর মত কাজ করছে। বিপদের বন্ধু সুবোধ। চিরকাল তার কাছে সে প্রকৃতই বন্ধু হয়ে থাকবে। এখন কি জিনিস নিয়ে সে হকারি করবে সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। দিদিমার সঙ্গে আলোচনা করে তাকে এগোতে হবে। কথায় বলে ‘তিন মাথা যার, বুদ্ধি নেবে তার।’ বুড়ো মানুষদের পাকা বুদ্ধি। জীবনযুদ্ধের অগাধ অভিজ্ঞতা। দিদিমা একটা পথ তাকে বাতলে দেবে, সেই বিশ্বাস তার আছে। সুবোধের সঙ্গে তার যা যা কথা হয়েছে সবটা দিদিমাকে জানিয়ে বাবলা বলল, “এখন আমি কি করব তুমি বলো না, দিদা? আমার কাছে তো কোন পুঁজি নেই। আর কি কারবার করব তাও তো বুঝতে পারছি না। সেটা আগে ঠিক করলে তবে না পুঁজির ধারণা করা যেতে পারে?”
সুবোধের কথায় খানিক চিন্তা করে দিদিমা বলল, “তুই দাদা এত খাটাখাটনি করতে যাবি কেন। আমি এই বুড়ো পেটটা যেভাবেই হোক চালিয়ে নেব। তুই ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যা। সেখানে তোর মা-বাবা আছে। নিজেদের সংসারে চলে গেলে এখন আর তোর রোজগারের চিন্তা সেইসঙ্গে পেটের চিন্তা করতে হবে না। কচি ছেলে তুই। তোর কি এখন পয়সা কামাবার বয়স হয়েছে? যা, চলে যা তুই তোর নিজের ঘরে।”
দিদিমার কথায় রেগে ‘কাঁই’ হয়ে যায় বাবলা! চোখ বড়বড় করে বলে,“দিদা, তুমি আমাকে এতই অকৃতজ্ঞ ভাবো? সেই একটুকখানি বয়স থেকে তুমি-দাদু মিলে আমাকে মানুষ করলে। দাদু চলে গেল। তুমি আমাকে জড়িয়ে বেঁচে আছো। আর আমি, তোমার সেই শেষ অবলম্বন, তোমাকে ফেলে রেখে স্বার্থপরের মত পালিয়ে যাব? কে বলেছে তোমাকে যে আমি এখন খাটাখাটনি করতে পারব না? ওই সুবোধ ছেলেটা। ও তো আমার সহপাঠী ছিল। সমবয়সী আমরা। সুবোধ পারলে আমি পারব না কেন? এ তুমি কেমন কথা বললে, দিদা?”

ক্রমশ…

Loading

Leave A Comment